Thursday, April 11, 2019

সমগ্রের করতলে - বিশ্বজিৎ







যিনি কবিতা লেখেন তিনি শুধু কবি নন,কখনও কখনও সাধকও হয়ে ওঠেনআর যখন তার কোনও সৃষ্টি বা রচনা চিন্তা,চিন্তন,আত্মপোলব্ধির গভীরতর থেকে উঠে আসে,ঠিক তখনই সেই সাধনার প্রকাশ ঘটেযা সৃষ্টিকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখেতার অস্তিত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে-----
প্রবল শীতে পাহারা সাজিয়েছে সাধক রোদ( নং কবিতা থেকে)
এই সাধনা সবার দ্বারা সম্ভব নয়তবে কেউ কেউ নিজের অজান্তেই তার অসম্ভব,অসামান্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাধক হয়ে ওঠেনকবি বেবী সাউ এর ব্যতিক্রম ননবেবী লাজুক নম্র স্বভাবেরনিজেকে আড়ালে একা রাখতেই ভালোবাসেনআর এই নীরবতাই তাকে প্রবল আত্মঅন্বেষণে খুবই সাহায্য করে থাকেযার দরুণ তার লেখায় মনুষ্যজীবনের অতিসূক্ষ দৃশ্যাবলীও কত সহজে ধরা পড়ে--------
সহজভাবে সাজাতে পারো চিত্রকল্প সমগ্রের করতলে”---( নং কবিতা থেকে)
কবি শধু নীরবতায় থেমে থাকেননি,তার মধ্যে প্রতিবাদের তীব্র স্বরূপটিও খুব স্পষ্টভাবে চোখে পড়তে দেখা যায়---
ব্যরিকেড ভেঙে এগিয়ে আসা/শহরের মিছিল/ঋতুস্রাবের রঙে পতাকা সাজিয়ে নিচ্ছে” ( নং কবিতা থেকে)
আসলে দেখাটাই সবআর সেই দেখা যত গভীর,নিরপেক্ষ হবে তার প্রকাশও ততটাই সহজ মনোরম হবেছড়িয়ে পড়বে মননের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপন প্রবাহে----
শীতকাল দীর্ঘ হয়শীতের দুপুরও যেমন শীতকাল,সন্ধ্যে /
ফুটপাত জুড়ে অসংখ্য নীল হলুদ শীতকাল বিক্রি হচ্ছে“( ১০  নং কবিতা থেকে)
কত সহজ ভাষায়,সহজ ভাবে এত অদ্ভূত দৃশ্যকল্পের অবতারণা করা যায়তা এই লেখা না পড়লে বলা অসম্ভব
বেবীর লেখায় মানসিক দোলাচলতা অসন্তোষের ছাপ ফুটে ওঠেকখনও নিজের সাথেই নিজের দ্বন্দ দেখা যায়এবং সেখানে ঠিক ভুল,বিশ্বাস-অবিশ্বাসেরও এক প্রশ্ন এসে কবিতার দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ে--- “ এই পথ দীর্ঘ,এই পথ ভ্রষ্ট”(১২ নং কবিতা থেকে)
বেবীর কবিতার ভেতর এক গভীর আত্মদহন চোখে পড়েপ্রতিমুহূর্তে নিজেকে ভাঙার গড়ার এক সুতীব্র খেলায় মাততে দেখা যায়আর কবির এই ব্যধিই তার লেখাকে যেন (suprem)পর্যায়ে উন্নীত করেছেছুঁয়ে গেছে হৃদয়ের অন্তঃস্হলেভাবনার এপার- ওপার সব ছাপিয়েছে বেবীর কবিতা---
)‘নিজের কাছে ফেরার জন্য অসংখ্য লোহার বাতাস পেরোতে হয়’(১৭ নং কবিতা থেকে)
)‘অনুসরণ করি বুদ্ধের মতোজমিয়ে রাখি আটটি পথের আড়াল’(১৮ নং কবিতা থেকে)
)‘আগুনের চারপাশে জোট বাঁধে অন্ধপাখি/তরল স্পর্শ’(২২ নং কবিতা থেকে)
)সমস্ত দুঃখের দিন তথাগত ভাঙো বারবার(৩৮ নং কবিতা থেকে)

আসলে  মূলত একটিই কবিতা তার নামে বইটিএকান্ন শরীরে ভাঙোঅর্থাৎ অনেক গুলো অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়েই গড়ে উঠেছে এই অসামান্য শরীরএই বইটির প্রতিটি কবিতাতেই কবি এক অদ্ভূত মেজাজ বজায় রেখেছেনএক শরীরী ছন্দ কাজ করে গেছে বইটির পুরো সিরিজ ধরেপ্রতিটি টুকরোর লেখা একে অপরের থেকে আলাদা তবুও মূল নামটির সাথে তাদের সর্ম্পক এতটুকুও কোনও অংশে বিচ্যুত হয়নিআর এখানেই লেখকের লেখার সার্থকতাএছাড়া বইটিতে আরও অনেক ভালো কবিতা রয়েছেএবং শোভন পাত্রের করা প্রচ্ছদ ছাপা বাইন্ডিং সব দিক দিয়েই প্রশংসার দাবী রাখে
                                                                    ---------

বেবী সাউ
একান্ন শরীরে ভাঙো
আদম প্রকাশনা
প্রচ্ছদশোভন পাত্র
মূল্য১২৫ টাকা

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়

সাহিত্য সমালোচনা- এই শব্দটিকে যদি ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে অবধারিতভাবেই দুটো শব্দ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সাহিত্য ও সমালোচনা। সাহিত্যের সমা...

পছন্দের ক্রম