বরফ শীতলতায় আচ্ছাদিত আধুনিক
মানসিকতা প্রতিবেশীর ভালমন্দ স্পর্শ করে না। আমাদের কান ছোঁয় না পার্শ্ববর্তী
স্বর..আমরা স্পর্শ বাঁচিয়ে রাখি। পড়ছিলাম কবি প্রণব বসু রায় এর সৃষ্টিসুখ থেকে
প্রকাশিত নবতম কবিতার বই" মাইনাস ডেসিবল"।
ভাঙনের খেলা এদিকসেদিকে "ভেঙে যাচ্ছে --যা
কিছু হাতের কাছে ছিল/ পাকা ফল, কুমড়োর বীজ, ঘুড়ির পাহাড়......" ভাঙছে মন বসত বিবাহ। মাছের আঁশটির মতো অপমান গায়ে লেগে থাকে
তবুও কী ভোলা যায়! "
রাণুদিদি আমাকে নেয়নি/সে অপমান ভুলিনি কখনও, যদিও বুঝেছি/ রাণুদিদি আমাকে ভয় পেতে চেয়েছিল, দুর্মর ভয় ও লাজ"
অপক্ক সকালে এইসব অপমান ছেড়ে বরফের দেশ ছেড়ে
"চলে যাব, যেতে তো হবেই, চলে যাব ঠিক'। ক্ষয়প্রাপ্ত জমিন ফসল ফলে না, বীজ থেকে মানুষ হয়না আর,--" এই স্থল বুঝি ঘোড়াদেরও নয়..."
চলে যাবেন রাখালিয়া, "এসময়ে যত কান্না পাহাড়ে ধসের মতো নামে/ত্রাণ চাই, মুক্তি চাই--আমরা পালাই পালাই"।
"ফ্রস্ট বাইটে পা কেটে গেলেও পর্যটন জায়মান থাকে"
যাবেন কোথায়!"যেতে তো হবেই" তাই কোথায়
যাবেন সে হদিশও তাঁর কাছেই আছে।
হদিশ আছে মিষ্টি জলের, বনপথের ছায়াময়তার
"আমি তো মহিষ চড়াই, চিনি বনপথ/ কোথায় মিষ্টি জল, কোনখানে ছড়ানো ছায়া/ সে খবর সব জানি"।
"এসময়ে যত কান্না পাহাড়ে ধসের মতো নামে/ত্রাণ চাই, মুক্তি চাই--আমরা পালাই পালাই"
পথ সহজ নয়। কড়াক্রান্তি হিসেব চুকিয়ে যাবে, যেতে যেতে পা যদি টেনে ধরে, সাপটে নেয় ফণা, আর বিষেবিষে ভরাকোটাল নামে! তাই
"পথেই হারিয়ে ফেলি কমলালেবুর কোয়া/বিদেশী পারফিউম আর কতটুকু প্রাণবায়ু দেবে!
সাবধানে যেতে হবে/সাপের গর্তে যেন পা না
পড়ে।"
এমনই অসাধারণ সব পঙক্তি সারাদিন আমাকে আচ্ছন্ন করে
রাখে । আরো একটি পঙক্তিতে আটকে যায়
চোখ..
" অস্বীকার করা হত্যাতুল্য--এই বিবেচনায় / মেনে নিতে হয় যে প্রজাপতি উড়ে
গেলে/ মাইনাস ডেসিবল শব্দ আছড়ে পড়ে জঙ্গলে,বাদাড়ে....
হতাশা বা উচ্ছ্বাসের কারণ ছাড়াই / এসো আমরা সেনা-
অভিবাদন দিতে / ধোপদুরস্ত পোশাক ও বুটের পালিশের দিকে/ নজর দিই"
বইটিতে ছত্রিশ টি একক কবিতা এবং "কয়েকটি
কবিতা " শিরোনামে আরো তিরিশ টি কবিতা আছে। কখনো গদ্য কবিতায়, কখনো অন্ত্যমিলে প্রণব বাবু সাবলীল ভাবে এগিয়েছেন। পাঠক হাত রাখলে বরফের মতো সহজ
স্বাভাবিতায় গূঢ় পঙক্তি গুলি মন ছুঁতে বাধ্য করবেই। যদিও বসন্ত, যদিও এখনই যাব না তবু নক্ষত্র নি:শ্বাসের ঘোরলাগা রাতে কাজের মধ্যে, ভালবাসায়, বিশ্বাসহীনতায়,সংকল্পে তাপ হীন দুটি হাতে কড়া নাড়ছে
শেষ কবিতার লাইন দুটি
"এই শীত রাতে চুল্লি ছাড়া তাপ নেই কোনো/আমরাও শুতে যাবো ওর কাছে খাটিয়া
বিছিয়ে"।
No comments:
Post a Comment