“নিঃশব্দে
অতিক্রম করি” কবি
শৌভ চট্টোপাধ্যায়ের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ,যার
৫৬ টি নামহীন কবিতা এবং শুরুতে একটি উৎসর্গ
কবিতা সম্পূর্ণ পৃথক একটি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে।শুরু করা যাক একদম মধ্যবর্তী একটি
কবিতা দিয়ে:
দ্বিধায় বিভক্ত ফল,
সে-ও
জানে
হত্যার সমস্ত গল্প ভয়াবহ নয়।মাঝে মাঝে,
খুনির চোখের জলও কাহিনির মোড়
সহসা ঘুরিয়ে দেয়।জলে মেশা ধাতু ও লবণ
অন্য
কোনো প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না
কোনো কোনো অপেক্ষারও প্রমাণ থাকে না। ভাবি,
কে এই শিথিল হাত ছুঁয়ে আছে,
কার
যাওয়া
ততখানি চলে যাওয়া নয়?
সারাক্ষণ হাওয়া দেয়,
হাওয়ার
ভেতরে খালি কানাকানি –
সে এক অন্ধজন্ম,
মূকজন্ম
একদিন ছিল! তারপর,
দুঃখবর্ণ
প্রজাপতি উড়ে এল এ-জন্মের রোদে
অন্ধকারে,
কোনো
কোনো অপেক্ষাও হত্যার মতন
দ্বিধান্বিত,রূপান্তরকামী-----
( ২৮ নং কবিতা)
----
‘ফল'
যদি বাহ্যজ্ঞান ধরে নিই তবে তা আমাদের কোনো
এক সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয়। সেরকমই
এক স্বীকৃত সিদ্ধান্ত হল – হত্যার
সমস্ত গল্পই ভয়াবহ ( যুদ্ধকালীন
সময়ে যা সত্য বলেও মনে হয়)।কিন্তু কবির ‘দ্বিধা’
স্বীকৃত
ধারণার আগে প্রশ্ন তুলে দেয়, জাগিয়ে
তোলে অন্তরোপলব্ধি, অন্য
ধারণা—হত্যার
সমস্ত গল্প ভয়াবহ নয়।বুঝতে
অসুবিধা হয় না যে এ গল্প বাইরের নয়, ভিতরের
; কথার নয় নৈঃশব্দ্যের।জীবনের নৈঃশব্দ্যের ভিতর কত মুহূর্ত,
কত
অনুভূতিকে ‘হত্যা’
করেই
আমাদের এগোতে হয়!
“ কে
এই শিথিল হাত ছুঁয়ে আছে,কার
যাওয়া
ততখানি চলে যাওয়া নয়?”---
এ তো কথাহীনতার ভেতর বসে থাকা এক অদ্ভুত
বাঙ্ময় গল্প।যেন
একটা গোটা অধ্যায় বলে দিয়ে যায়,স্মৃতির
অধ্যায়।তারপর
“ দুঃখবর্ণ
প্রজাপতি উড়ে এল এ-জন্মের রোদে”---
বিবাহের ঈঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে কি?
প্রজাপতির
রঙের ভিতরেও লুকিয়ে থাকে বিষাদ।
শেষ দুই পঙক্তি
‘কাহিনির মোড়’
ঘুরিয়ে
দেয়। অপেক্ষাকে
অতিক্রম করতে হয় নিঃশব্দে। ‘দিধান্বিত'
শব্দের মধ্যে আছে পিছুটান আর ‘রূপান্তর’
শব্দাংশে
আছে অ-ভয়াবহ হত্যা,যা
আসলে এগিয়ে যাওয়া। আর
তখনই সম্পূর্ণ হয় প্রথম স্তবক।
“খুনির চোখের জলও
কাহিনির মোড়
সহসা
ঘুরিয়ে দেয়।….”
“অপেক্ষা”
শব্দটি
নিয়েও খেলা করা হয়েছে। পঞ্চম
পঙক্তিতে যা ‘প্রয়োজন'
তার পরের পঙক্তিতেই তা “প্রত্যাশা”,বা
“আগ্রহে চেয়ে থাকা”। আবার
“রোদে”
শব্দের
ঠিকে পরেই “অন্ধকার”
শব্দের
প্রয়োগও মুগ্ধ করে তার অর্থময়তায়।দুটি শব্দের মাঝে একটি পঙক্তি এবং স্তবকের অন্তরও উল্লেখযোগ্য।
বুঝতে পারি কবি শৌভ চট্টোপাধ্যায়ের মনস্তত্ত্বের
গভীরতম কোণে যাতায়াত, তার
কবিতায় বহুস্তর তো থাকবেই। শুরু করেছিলাম মাঝখান থেকে,
এবারে
আসব একেবারে শুরুর কবিতায়। :
আমি তাকে যে-নামেই ডাকি,
তাতেই
সে সাড়া দেয়,
কাছে এসে বসে। বারান্দার রোদ থেকে ঘরের
মেঝেতে
অনায়াস আনাগোনা।কখনো হাওয়ায় ভাসে,
কুতুব
মিনারে
টিয়ার ঝাঁকের সঙ্গে অকস্মাৎ উড়ে যেতে দেখি
অবশেষে অন্ধকারে,
সে
নিজেই মুছে ফেলে, একে
একে, তার
সমস্ত থাকার চিহ্ন,
না
থাকারও। আমি
শুধু
একটি
নামের খোঁজে ঘর-বার করি
যদিও সমস্ত নাম,
আমি
জানি, আকস্মিক
আর্তনাদ ছাড়া
কিছু নয়,
আরও
কিছু নয়! --- ( ১
নং কবিতা)
শুরুর কবিতা যেমন হয় ঠিক তেমনই।জীবন সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়েই নিয়তিতাড়িত আমাদের শুরু হয় একটা
খোঁজ।একটা
উদ্দেশ্য, একটা
অর্থময়তার খোঁজ,একটা
‘নামের’ খোঁজ।“নাম”
তো
চিহ্ন মাত্র।আরোপিত। একটা ছায়া,
সত্যের
ভ্রম।নামের
গভীরে থাকে ‘বস্তু',সত্তা,
আত্মা,যা আসলে অবাধ,অসীম,
বোধগম্যতার
বাইরে।তবু
আমরা তাকে অর্থময় করে তোলবার আপ্রাণ চেষ্টা করি এবং জীবনের সার্থকতা খুঁজি নিজের মতো
করে।কিন্তু
কবি “আমি
জানি” বলে
জোর দিয়ে বলছেন সমস্ত নাম আসলে “আকস্মিক
আর্তনাদ”।আকস্মিক কারণ নাম সাময়িক;
আর
অর্থহীনকে অর্থময় করার মধ্যে যে একটা সংঘাত আছে সেটাই আর্তনাদ।একটি কাব্যগ্রন্থ অ্যাবসার্ডিটির একপ্রান্ত
ছুঁয়ে এইভাবেই অন্যপ্রান্তে যাত্রাপথ শুরু করে দিচ্ছে ।দিচ্ছে নিঃশব্দে।
সেই অন্যপ্রান্তে তো যাবই,
কিন্তু
কবির পথ তো পাহাড়ি পথ, পাকদণ্ডী
বেয়ে যেতে হবে।যেতে
হবে বিবিধবর্ণের বাঁক পেরিয়ে। সে রকমই এক বাঁক হল প্রেম।সমস্ত অস্থিরতা নিয়েও কী ভীষণ স্থির
প্রেম,ঠিক
তার লেখনীর মতো!পড়ি
:
আমার
সমস্ত কথা
কেন
যে অক্ষরবৃত্ত ছুঁয়ে থাকে
বুঝিনি
এখনো!
হয়তো
কথারও একটা টান আছে,
অভিপ্রায়
আছে। আমাকে
সে
হাতের
পুতুল ভাবে, বেঁধে
রাখে
অকাট্য
শাসনে
তুমিও
কি ভাব না তেমন?
রাত্রিদিন,
আমাকে
দিয়েই
বলাও
অপ্রিয় কথা
সমস্ত
রসের কথা, আমাকেই
বল!----- ( ২৭ নং)
আহা!
প্রেয়সী
অক্ষরবৃত্তের শাসনে তাকে বেঁধে রেখেছে।যাত্রাপথের অমন সংকটময় শুরুর পর কী বর্ণময় বাঁক না?
এই
বাঁকে কথা আছে,অভিপ্রায়
আছে,শাসন আছে,
বাঁধন
আছে, আর আছে প্রেম,
যে
প্রেমের নাম স্ত্রী ,যে
প্রেমের নাম অক্ষরবৃত্ত, যে
প্রেমের নাম জীবন!যতই “আকস্মিক আর্তনাদ”
হোক,
তা
সুন্দর!
এভাবেই পথ চলেন কবি আমাকে সঙ্গে নিয়ে অন্যপ্রান্তের
দিকে। বাঁকে
বাঁকে আসে “ছুটির
দিন,দুপুরের মাংস-ভাত,
/মুনিয়া ও রুবাইয়ের টান”,আসে “সমকামী
পুরুষের হাত”,আসে
অপেক্ষা আর স্মৃতি অশরীরী হয়ে পরাবাস্তবতার হাত ধরে
:
কার বাড়ি মাঠের
ওধারে, শাদা?
…..
কারা আসে কারা
যায়, অস্পষ্ট গানের সুর
ভেসে
আসে মাঠের এপাশে! ( ৩০
নং কবিতা)
আসে অদ্ভুত রোমান্টিক কিছু উপমা এইসব পরাবাস্তব
পেরিয়ে:
পিয়ানোর রিড বলে
ভুল হয়,এইভাবে
সরল বৃক্ষের ছায়া
মাটিতে পড়েছে
আমি তাতে পা দিতেই,
মর্মরের
গান
চতুর্দিকে বেজে
ওঠে।…. ( ৩৫ নং কবিতা
)
আবার ভারতবর্ষ,
পৃথিবী
আর ঠাকুমা কবির কল্পনায় “পুরোনো
ছবির মত—অনুজ্জ্বল,
কীটদষ্ট,
ধূলোয়
মলিন”।
এসবকিছুই আসে নৈঃশব্দ্যের ভিতর দিয়ে,
পাহাড়ি
চেতনার পথে।কবি
জীবনের উদ্দেশ্যহীনতা এবং অর্থহীন পুনরাবৃত্তিকে খুব সহজভাবে মেনে নিয়েছেন বলেই “রুবাইয়ের
শিয়রের কাছে/ভাষা
তার সাজ খুলে, অস্ত্রশস্ত্র
ফেলে,/চুপ
করে বসে আছে – চোখে
জল!” এই জলে বিস্ময় আছে,
মায়া
আছে,বিষাদ আছে কিন্তু কোথাও
হতাশা নাই।চলতে
চলতে পৌঁছে যাই শেষপ্রান্তে। দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে এমন অসাধারণ কবিতা
:
“দু-জন ছায়ার মধ্যে কোন জন তুমি,
এই প্রশ্নে,
একদিন,
অসহায়
বকুল ঝরেছে
*
বকুল ঝরেছে। তবু,চুপিচুপি
বলে গেছে দু-একটি কথা
নতুন দৃশ্যের মধ্যে,
সেইটুকু
খালি
ফুল হয়ে ফুটে আছে…
যার কোনো নাম নেই,
ঝরে
পড়া নেই --- ( ৫৬ )
কানে বাজে রবীন্দ্রনাথ
“উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে….”।বুঝি এ তো শেষ নয়,
শুরু।ওই তো আর একটা পাহাড়। যতই মনে হোক “শুরুর
মধ্যে আকস্মিক প্রতারণা ছাড়া /কিছু
নেই…” তবু শুরু করতে হবে। “ভাষার
আড়াল থেকে” খুঁজে
নিয়ে “আড়ালের
ভাষা” হয়ে
উঠবে “প্রতিটি
কবিতা একটি অপূর্ব ব্যর্থতা”।
২
কবি শৌভ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাপ্ত পাঠবৈচিত্র্য
বেশ সম্ভ্রম জাগায়,বিশেষত
তার দর্শনচর্চা। তিনি
যে রীতিমত স্কলার তা এই কাব্যগ্রন্থেই প্রকাশ পায়।বিভিন্ন দার্শনিকদের রেফারেন্স এবং
ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি তার কাব্যগ্রন্থের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।আসুন দেখা যাক।প্রথমেই নজর কাড়ে বই-এর প্রচ্ছদ,
যেটি
সপ্তদশ শতকের চীনা চিত্রকর শি-তাও এর আঁকা
“Last Hike Together”।চেতনা
রঙের ছবিটি দৃশ্যতই এই বই-এর
কবিতাগুলির সমার্থক।এরপর
পাওয়া যায় ঋগ্বেদের একটি শ্লোক। তারপর একটি কবিতা তিনি
নিবেদন করেছেন ল্যুডহ্বিগ হ্বিটগেনস্টাইনকে। বিংশ শতাব্দীর এই অস্ট্রিয়ান দার্শনিকের দ্বারা কবি
গভীরভাবে প্রভাবিত। তাই
এমন নিবেদন। গ্রন্থের
নামটির ঋণও এনার কাছেই: “what we can not
speak of, we must pass over in silence.”( “Tractatus”)।এছাড়াও তিনি সরাসরি ঋণস্বীকার করেছেন
টলেমি,আরিস্ততল,ফেরনান্দো
পেসোয়াঁ যাঁর একটি ছদ্মনাম আলবেরতো কায়েইরো,মার্সেল
প্রুস্ত,মালার্মে,তাও
তে চিং এর প্রতি।প্লেটো,
দেরিদা
এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবও লক্ষণীয়।১২ নং কবিতায় কবি অক্টাভিও পাজের ক্লডিয়াস
টলেমিকে উৎসর্গ করে লেখা “Brotherhood” কবিতার
স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়,দেখা
যায় ভ্যান গগের ছবির প্রভাব( “Starry Night Over
the Rhone”)।,তবু
কবিতাটি তার নিজস্বতায় পূর্ণ ---
“….. দশহাজার
বছর (আনু.)আগেকার
তারার আলোটি
এখন আমারই চুলে লেগে আছে।বোঝা গেল,
মানুষের সভ্যতার সে কিছুই জানে না তেমন
সবেমাত্র,
শিখেছে
কৃষির কাজ, নদীমাতৃকতা,
দু-একটি সহজ যন্ত্র,
পাথরের….
টলেমি বা আরিস্ততলের নাম জীবনে শোনেনি
ততক্ষণাৎ স্থির করি,
আমি
তাকে
আমার জন্মের কথা,
আমার
দুঃখের কথা
সবই
এক সবিস্তার চিঠিতে জানাব
এই বিস্তৃত পাঠ তাঁর কবিতাকে কোথাও জটিল
বা স্কলারলি করে তোলেনি, বরং
সহজ, সাবলীল এবং নিজস্ব করে
তুলেছে।
৩
আবার,আমার
মনে হয়েছে, কোথাও
কোথাও এই দর্শন পাঠের প্রভাবই কবিকে এক দ্বন্দ্বের সম্মুখে দাঁড় করিয়েছে। কেন মনে হল এমন কথা?
দেখা
যাক। দর্শনের
ভিতর কোনো কবিতা থাকে না বা দর্শন কোনো কবিতা নয়;কিন্তু কবিতার ভিতর অবশ্যই দর্শন থাকে। তাকে আবিষ্কার করতে হয়,
কারণ
তা লুকিয়ে থাকে শব্দের অন্তরে,আত্মায়।কবিতায় কবি তাঁর বর্ণময় অভিজ্ঞতা এবং
কল্পনাকে চিন্তা প্রক্রিয়ার ভেতর মেশান এবং তাকে শব্দে ফুটিয়ে তোলেন। কবিতায় তাই অভিজ্ঞতা এবং
কল্পনা হয়ে ওঠে মুখ্য,সেগুলোই
পাঠককে এক রহস্যময়তায় নিয়ে যায়, তারপর
দর্শন আবিষ্কৃত হয়ে নদীগর্ভস্থ পলির মতো থিতিয়ে যায় পাঠকের মনে। “নিঃশব্দে
অতিক্রম করি” কাব্যগ্রন্থে
অভিজ্ঞতাগুলোকে কেমন দূরবর্তী মনে হয়। তা যেন, কখনো
কখনো,দর্শনকে
লক্ষ্য করে এগিয়ে যায়।যেন
মিলিয়ে দেখা। এটা
কবির প্রবণতা এবং তা হতেই পারে কারণ তাতে কবিতার গতিপথ কোথাও রুদ্ধ হয়েছে বলে মনে হয়
না।তবুও
অভিজ্ঞতা মুখ্য হতে চেয়ে কবির মনে এক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে :
যা-কিছ
দেখার ছিল, সেভাবে
দেখিনি। আর,
যেটুকু
দেখেছি, তা-ও
মনে নেই
….. অনেক কিছুই নাকি দেখা বাকি,
বুঝে
নেওয়া বাকি…. ( ২৪
নং কবিতা)
কোথাও আবার কবি এই দ্বন্দ্ব স্বীকারও করছেন:
…. শাদা
পাতা
আমার
চোখের সামনে মেলে ধরে বল—
‘তবে
একে ধ্বংস করো, একে
আরও কলঙ্কে সাজাও! ‘
অথচ
তুমিও খুব ভালো করে জান, চারিদিকে
এত
যে অনর্থ ঘটছে, সে-বিষয়ে
কথা
বলা আমার সাজে না
আদ্যন্ত
সংসারী আমি,স্বার্থপর!
সুযোগ
পেলেই
পাহাড়ে
বেড়াতে যাই…. ( ৪২
নং কবিতা)
এই পাহাড়টি চেতনার পাহাড়ও বটে।তাই তার অভিজ্ঞতাগুলোও যেন উপলব্ধ। তার
কবিতায় ছুটির দিন,অপেক্ষা
,মাংস-ভাত,রবিবার
ঘুরেফিরে আসে। নাগরিক
কর্মব্যস্ত জীবনে মুনিয়া-রুবাই
কেবল যেন তার ছুঁয়ে দেখা জীবন। বাকি জীবন তার দূর থেকে দেখা
:
২৯
একদিন,
দূর
থেকে দেখেছি, পৃথিবী
খুব
একটা অচেনা নয়।….
১৫
কেল্লার
বুরুজ থেকে চোখে পড়ে, নীচে
ছোটোখাটো
বাড়িঘর, মানুষের
অগোছালো
জীবন রয়েছে…..
২০ নং কবিতায় কবি যখন বলছেন “পুকুরঘাটে
বসে বসে, ও-বাড়ির/ছোটো
বউ ভাবে “….
তখন তা কবির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নয় বরং
সুদূর অতীতের কোনো গল্পে শোনা অভিজ্ঞতা বলেই মনে হয়।
আবার ৩২ নং কবিতায় “কুনস্কাপস্কোলান”
শব্দটি
কবিকে এক এপিফ্যানিক রিয়ালাইজেশানে পৌঁছে দেয়।এই বিস্ময় প্রত্যেকেরই যাপনের অংশ
কিন্তু কবি ভাষার ভিতর দিয়ে কাঁটাতারকে তুচ্ছ করে তার সীমা অতিক্রম করে গেলেন:
আশ্চর্য
হলাম দেখে, শব্দটিতে
বিদেশের,
তুষারের
লেশমাত্র লেগে নেই আর। বরং
সমস্ত গায়ে
ভারতীয়
সকালের রোদ আর দু-একটি শিশুর
অর্থহীন
কলরব, হাসির
ফোয়ারা
জীবনের প্রত্যক্ষ ঘটনার অভিজ্ঞতা আবছা হয়ে
গিয়ে তত্ত্ব হয়ে তার কাছে ধরা দিল।অভিজ্ঞতা নয় শব্দ মুখ্য হল,মুখ্য
হল তত্ত্ব।
৪
জীবনের ঝড়ঝঞ্ঝা যেন কবির কাছে এক উপলব্ধি,ছুঁয়ে দেখা নয়।প্রাবল্যে তৃপ্ত হওয়া নয়,প্রগাঢ়তায়
মুগ্ধ হওয়া।জীবন
যেন তার কাছে একটা ধ্যান,কাঁপানো-হাঁপানো সাঁতার নয়।কল্পনা করা যায় অসংখ্য বইবন্ধুর মাঝে
কবি মুহূর্তকে,জীবনকে
কল্পনা করছেন, মিলিয়ে
নিচ্ছেন ও উপলব্ধি করছেন এবং এইভাবেই নিঃশব্দে অতিক্রম করে চলেছেন। ---
অরূপ
ডেকেছে। তবু
এ-বছরও
যাইনি পাহাড়ে!
কোথাও
যাইনি। ঘরে
বসে
বসে, দেখেছি সেসব
যা-কিছু
পাহাড় নয়, পাহাড়ের
মতো
নয়। অন্য
জিনিস,অন্য
জিনিসের
মতো,
চারিদিক
আলো করে আছে
এইভাবে,
ধীরে
ধীরে
পাহাড়ের
নিকটে এসেছি
অন্ধকার
ঘরে বসে – ভেবেছি
অসীম---- ( ১৯ )
এই সচেতন প্রবণতাই,আমার
মনে হয়, কবিকে
বাংলা কবিতার এক অনন্য স্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছে।
কাব্যগ্রন্থ
: “নিঃশব্দে অতিক্রম করি”
কবি
: শৌভ চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশনী
: শুধু বিঘে দুই
প্রচ্ছদ
: শি-তাও এর আঁকা
“Last Hike Together”
দাম :
১২৫/-
No comments:
Post a Comment