যিনি
কবিতা লেখেন তিনি শুধু কবি নন,কখনও কখনও সাধকও হয়ে ওঠেন।আর
যখন তার কোনও সৃষ্টি বা রচনা চিন্তা,চিন্তন,আত্মপোলব্ধির গভীরতর থেকে উঠে আসে,ঠিক তখনই সেই সাধনার প্রকাশ ঘটে।যা
সৃষ্টিকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখে।তার
অস্তিত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে।-----
‘ প্রবল শীতে পাহারা সাজিয়েছে সাধক রোদ।( ১ নং কবিতা থেকে)।
এই
সাধনা সবার দ্বারা সম্ভব নয়।তবে
কেউ কেউ নিজের অজান্তেই তার অসম্ভব,অসামান্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাধক হয়ে ওঠেন।কবি
বেবী সাউ ও এর ব্যতিক্রম নন।বেবী
লাজুক ও নম্র স্বভাবের।নিজেকে
আড়ালে একা রাখতেই ভালোবাসেন।আর
এই নীরবতাই তাকে প্রবল আত্মঅন্বেষণে খুবই সাহায্য করে থাকে।যার
দরুণ তার লেখায় মনুষ্যজীবনের অতিসূক্ষ দৃশ্যাবলীও কত সহজে ধরা পড়ে।--------
“ সহজভাবে সাজাতে পারো এ চিত্রকল্প সমগ্রের করতলে”---( ৩ নং কবিতা থেকে)
কবি
শধু নীরবতায় থেমে থাকেননি,তার মধ্যে প্রতিবাদের তীব্র স্বরূপটিও খুব স্পষ্টভাবে চোখে পড়তে দেখা যায়---
ব্যরিকেড
ভেঙে এগিয়ে আসা/শহরের মিছিল/ঋতুস্রাবের রঙে পতাকা সাজিয়ে নিচ্ছে” ( ৯ নং কবিতা থেকে)
আসলে
দেখাটাই সব।আর
সেই দেখা যত গভীর,নিরপেক্ষ হবে তার প্রকাশও ততটাই সহজ ও মনোরম হবে।ছড়িয়ে
পড়বে মননের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপন প্রবাহে।----
“শীতকাল দীর্ঘ হয়।শীতের
দুপুরও যেমন শীতকাল,সন্ধ্যে ও/
ফুটপাত
জুড়ে অসংখ্য নীল হলুদ শীতকাল বিক্রি হচ্ছে।“( ১০ নং কবিতা থেকে)
কত
সহজ ভাষায়,সহজ ভাবে এত অদ্ভূত দৃশ্যকল্পের অবতারণা করা যায়।তা
এই লেখা না পড়লে বলা অসম্ভব।
বেবীর
লেখায় মানসিক দোলাচলতা ও অসন্তোষের ছাপ ফুটে ওঠে।কখনও
নিজের সাথেই নিজের দ্বন্দ দেখা যায়।এবং
সেখানে ঠিক ভুল,বিশ্বাস-অবিশ্বাসেরও এক প্রশ্ন এসে কবিতার দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ে।--- “ এই পথ দীর্ঘ,এই পথ ভ্রষ্ট”(১২ নং কবিতা থেকে)।
বেবীর
কবিতার ভেতর এক গভীর আত্মদহন চোখে পড়ে।প্রতিমুহূর্তে
নিজেকে ভাঙার ও গড়ার এক সুতীব্র খেলায় মাততে দেখা যায়।আর
কবির এই ব্যধিই তার লেখাকে যেন (suprem)পর্যায়ে উন্নীত করেছে।ছুঁয়ে
গেছে হৃদয়ের অন্তঃস্হলে।ভাবনার
এপার- ওপার সব ছাপিয়েছে বেবীর কবিতা।---
ক)‘নিজের কাছে ফেরার জন্য অসংখ্য লোহার বাতাস পেরোতে হয়’(১৭ নং কবিতা থেকে)
খ)‘অনুসরণ করি বুদ্ধের মতো।জমিয়ে
রাখি আটটি পথের আড়াল’(১৮ নং কবিতা থেকে)
গ)‘আগুনের চারপাশে জোট বাঁধে অন্ধপাখি/তরল স্পর্শ’(২২ নং কবিতা থেকে)
ঘ)সমস্ত দুঃখের দিন তথাগত ভাঙো বারবার(৩৮ নং কবিতা থেকে)
আসলে মূলত একটিই কবিতা তার নামে বইটি ‘একান্ন শরীরে ভাঙো’।অর্থাৎ
অনেক গুলো অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়েই গড়ে উঠেছে এই অসামান্য শরীর।এই
বইটির প্রতিটি কবিতাতেই কবি এক অদ্ভূত মেজাজ বজায় রেখেছেন।এক
শরীরী ছন্দ কাজ করে গেছে বইটির পুরো সিরিজ ধরে।প্রতিটি
টুকরোর লেখা একে অপরের থেকে আলাদা তবুও মূল নামটির সাথে তাদের সর্ম্পক এতটুকুও কোনও অংশে বিচ্যুত হয়নি।আর
এখানেই লেখকের লেখার সার্থকতা।এছাড়া
বইটিতে আরও অনেক ভালো কবিতা রয়েছে।এবং
শোভন পাত্রের করা প্রচ্ছদ ও ছাপা বাইন্ডিং সব দিক দিয়েই প্রশংসার দাবী রাখে।
---------
বেবী
সাউ
একান্ন
শরীরে ভাঙো
আদম
প্রকাশনা
প্রচ্ছদ
– শোভন
পাত্র
মূল্য
– ১২৫
টাকা
No comments:
Post a Comment