Saturday, April 13, 2019

আগুনের বসন্ত রং- রম্যাণী চৌধুরী





রং ! কল্পনা ? নাকি মোহ ? প্রজাপতি নাকি এক আবছা বর্ণালীর জলছবি ? তারওপর এসেছে আগুনের ছোঁয়া । দুটি শব্দ কে নিয়ে এক আদুরে সমন্বয় তৈরি করতে বসে মনে প্রথমেই উঁকি দিচ্ছে দিঘীর শান্ত জলের তলায় যত্নে প্রতিপালিত সম্মোহনী ।
রিনা গিরি এবং " এরা" র সম্পর্ক নতুন নয় । রিনা বরাবরই বহুমাত্রিক আর তারই দুটি ভিন্ন মাত্রা হল পদ্য় গদ্য়ে আঁচড় এবং সমাজ কর্মীর মুক্ত চিন্তন । কাজেই আনন্দীর সঙ্গে সহমর্মিতার আদান প্রদান যে হবেই , এতে কোনো সন্দেহ নেই ।
 
কাগজ কলমের তুলি রং এ কবি প্রথমেই সিড়ি বেয়ে নেমে এসেছেন জোড়াসাঁকোর সন্ধেমুখে । উৎসবমুখর চাতালে কবি হাতড়ে চলেছেন তাকে । মুখোমুখি যখন কবি এবং তার পুরুষ রবীন্দ্রনাথ , তখনই নেমেছে মুষল বৃষ্টি ।

দ্বিতীয় কবিতায় কবি পাড়ি দিয়েছেন কোপাইয়ের কোলে । শীতের হাত ধরে ফসন্তের বেড়ে ওঠা আর ঠিক তারপরেই বৈশাখ সমারোহ । সাধুবাদ দাবি করে বৈকি ।

রঙের আগুন কবিতায় চিত্রকল্প এবং রবীন্দ্রনাথ মিলেমিশে একাকার । রাঙামাটির দেশের মতোই কবির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রবির ছোঁয়া ।

খোলাচিঠিতে বৈশাখের জোড়াসাঁকো পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছে দুর্গা বিসর্জনে । এখানে কবির eye to eye symphony has successfully transformed into "eye-conic" chemistry ..
বাঙালীর ঠাকুরজনিত দ্বৈত চিন্তাধারায় দুর্গা আর রবীন্দ্রনাথ ধরা পড়েছে " আশ্বিনে বাঙালী ....." । বিসর্জনে গঙ্গার বুকে কবি নিজের মধ্য়ে আয়না রেখেছেন কাদম্বরীর । কোথাও একটা চূড়ান্ত তৃপ্তি এবং অতৃপ্তির মিশেলে এ এক নতুন রং ।

পাতা ওল্টানোর সময় দেখছি কবির যাপনচিত্র নিতে চাইছে অন্য বাঁক । এক গভীর শূন্যতার মধ্য়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ভাষাবন্ধনেবেধে রাখার এ এক ব্য়তিক্রমী আয়োজন ।
 

কবিতা বাসরে কবির স্পষ্ট উচ্চারণ " হলুদ গোলাপ ..." । গোলাপের অভিমান ? নাকি কবির অভিমানী হৃদয়ে আচমকাই গোলাপী বাতাস ? আরও এক চিত্রকল্প ।

রবীন্দ্রনাথ মানে তো শুধুই বিশ্বকবি কিংবা সমালোচকের ক্য়ালাইডোস্কোপিক ভিউ নয় । তিনি একাধারেরিক্সাচালকের গুরুদেব । সাদামাটা এই সত্যকে অনায়াসে লিপিবদ্ধ করেছেন " মহামানব" কবিতাটিতে ।
 

পরের রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক কবিতাটিতেও দুহাত ভরে
  শ্রদ্ধার অঞ্জলি।

শান্তিনিকেতন লেখাটিতে কেন যেন একটু বেশীই অস্থির কবি ।রিনা গিরি এখানে রক্তমাংসের নারী । প্লেটোনিক নয় , আস্তিক্যবাদের সঙ্গে রয়েছে পুনর্জন্মে অবিশ্বাস ! যা কিছু চাই , এ জন্মেই আর কেনই বা নয় ? " বড় বেশী কাছাকাছি " ।

পৌষমেলায় আবারও রূপকল্পের টান । কবি ক্রমশই হয়ে উঠছেন সাহসিনী প্রেমিকা -- খোয়াই , ছাতিমতলা , তবু কানে বাজছে একটাই নাম । অন্য এক স্পর্শকাতরতা ?

দরজা খুলে প্রথমেই ১৪১৮র বসন্ত উৎসব । কবির প্রাণ রয়েছে এখানে । তাই তো সূত্রপাতেই " দেরী আর সহে না " । সুবর্ণরেখা , পলাশের চুম্বক । 
কবি এনেছেন বৈতালিক । ছাত্রছাত্রীদের বসন্ত আবাহন । ঋতু মাদকতার মধ্যে লেখক ভোলেননি ৮ই মার্চ । আন্তর্জাতিক নারী দিবস । টি শার্টে করুণ আর্ত মুখ । 

মুক্ত গদ্যের টঙে লেখাটিতে উঠে এসেছে সুনীল , সৌমিত্র মিত্র , পল্লব কীর্তনীয়া , নাজমুল হক ।

পাতা ওল্টানোর আগে -- rina giri reporting from shantiniketan ...

     সুজনেষু । অন্যরকম উপস্থাপনা । নেহাৎই চিঠি ? নাকি কোথাও দোটানার দোলনায় দুলেছে লেখকের মন ? চৈত্র বিকেলের হাওয়ায় আবারও শান্তিনিকেতন , রবীন্দ্রনাথ , অপূর্ণতা , উদাসী হাওয়া । ঘটনাপ্রবাহ নয় , এরা যেন চিরাচরিত অনুভূতির পর্যায়ক্রমিক সারণি ।

রঙের আগুনের ঢিমে আঁচে এবারে এক নতুন রং মিলান্তি । শেষ রং জার্নি ।
শাণিতা আর ললিত । দুটি ভিন্ন রং যাদের বাইক জার্নির শুরুতে সম্পর্কের নামটা চিনতে না পারলেও আগ্রহ জন্মেই যায় । সময়ের সঙ্গে বিস্তার পাচ্ছে সম্পর্কের নাম কিংবা কখনও বা নাম পেলেও পাল্টে যাচ্ছে যাপনচিত্র । একুশ শতকের এই যাপনচিত্রকেই একটা দুরন্ত মোড়কে পেশ করেছেন লেখক ।
                    আবারও বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস , আবারও ছাতিমতলা । লেখকের প্রশ্বাসে বাসা বেঁধেছে শান্তিনিকেতন । বাসা বেঁধেছে শাণিতা আর ললিত ও কিন্তু এ বাসা , সকলের চেনা " ইয়ে তেরা ঘর ইয়ে মেরা ঘর "নয় । ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সইসাবুদের সাত মাস বাদেও পুরুষ রং আর নারী রং কিছুটা একমাত্রিক , বাকিটা ভিন্নমাত্রিক । আধুনিক সমাজের চালচিত্র তো বটেই ,তবু কেন জানি মনে হয়েছে এও কিছু কম প্রাপ্তি নয় - এমনটাই বলতে চেয়েছেন রিনা গিরি । 
     রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা দেখিয়েছেন ঠিকই , কিন্তু হয়ত তখন এত বিভিন্ন মাত্রার অস্তিত্ব ছিল না । 
ছিল না তখন , রয়েছে এখন আর তাই রিনা গিরির কাগজ কলমের জার্নিতে অচেনা রঙের আগুন , নতুনত্বের সুলুকসন্ধান ॥


No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়

সাহিত্য সমালোচনা- এই শব্দটিকে যদি ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে অবধারিতভাবেই দুটো শব্দ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সাহিত্য ও সমালোচনা। সাহিত্যের সমা...

পছন্দের ক্রম