আগের সংখ্যাগুলি

Saturday, April 13, 2019

ঘনঘোর লেগে আছে... - সার্থক রায়চৌধুরী







বইমেলা থেকে সংগৃহীত কবিতার বইগুলি একে একে পড়ে চলেছি। আজ শেষ করলাম অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের- 'শূন্যস্থানে তাকাও' কাব্যগ্রন্থটি। খুব খুঁতখুঁতে ও নির্দয় পাঠক আমি। প্রতিটি রচনা একাধিকবার চূর্ণ বিচূর্ণ করে পাঠ করেছি। আমি অভিভূত।২৬ টি লেখার মধ্যে(ভূমিকা ও প্রবেশক নিয়ে), ২৬ টিই মুগ্ধ করলে চমকে উঠতে হয় বইকি। আর তার মধ্যে ১৬ টি যদি হয় কালজয়ী তাহলে মন্ত্রমুগ্ধ হতে হয় অজান্তেই। গুহা, বিশ্বাস অমনিবাস, হ্যামলেট,নতুন বাঁশিওলা, সংসার গাথা, সার্কাস থেকে ছুটির সময়, চরিত্রহীন, মিথ্যে বলার আগে, যেমনটা হওয়া উচিত, মা-কে, অবনত বিস্ময়গুলি, যা যা হলোনা, যা যা হলো,যৌনবিষাদ.... এক অনন্য যাত্রার সূচনা। পাঠক পড়ুন। পাঠক.....
"তুমি ভাসিয়ে দিয়েছ
আমি ভেসে চলে গেছি...
...তুমি পার থেকে আজ
যাকে ভাব তোমার ভাসান"

এ উচ্চারণ সুমন্ত মুখোপাধ্যায়ের।
কাব্যগ্রন্থ- জল বিনা মীন।

"কি একলা যে হয়ে উঠেছিল
কাকে বলবো
আমি আজ মাছির সংসারে বসে আছি
ধ্বনির সংসারে
যদি কালো ফুল ফুটে উঠল
কে শুনিল রাজেশ্বরী"..

কে বলে লেখা হয়না? কে বলে সুন্দর নেই?
যারা প্রকৃত সারস দেখেন নি, চেয়ে দেখুন, কাছে যাবেন না। চিড়িয়াখানার কবিদের কাছে যান, গায়ে হাত দিয়ে দেখুন, ছবি তুলুন, অজস্র অসহ্য বাজে লেখায় লাইক দিন, চুমু খান, সাহিত্য পাঠের ছবি পোস্ট করুন, পুরস্কার দিন, এ ওর পিঠ চাপড়ান, শুধু এই কবিদের কথা কখনো দয়া করে কখনো বলবেন না।

দু বার পড়লাম। দুবার ই আচ্ছন্ন হলাম। ঘোর লেগে আছে।

শান্ত জল বয়ে যেতে যেতে হঠাৎ ই তোমার প্রতিচ্ছবি মেলে ধরে, তুমি একা, বিবর্ণ, শিউরে ওঠ, ডুকরে ওঠে মন। হঠাৎ ই ঘূর্ণি তোলে জল। ভাসমান, ছবি, পাতা , আকাশ সব গ্রাস করে নিয়ে বয়ে চলে ধীরে। তুমি ছুটতে থাকো তার পিছু পিছু, সে এবার ভাসিয়ে নেবে তোমাকেও, তুমি বুঝতে পারোনা কোনটা জল কোনটা অশ্রু কোনটা বৃষ্টি হয়ে আসে...

"সন্ধ্যার আকাশ লাগল ভোরের গঙ্গায়
দূরে নাভি
মাটিচাপা দিয়ে কার রোগা ছেলে
জলে নামছে

পিছল কাদায়"

পড়তে থাকি আর রাত বেড়ে যায়।
পর পর শ্বাসরোধী, শান্ত অথচ কি যেন এক আত্মসংক্রমন গুমরে উঠতে উঠতে সংগীত হয়ে হালকা ডানা মেলতে থাকে মাথার উপরে..  ছায়া পড়ে জলে। জল থেকে অভাগা মাছের ঝাঁক লাফ মেরে উঠে পড়েছিল ডাঙায়, লাফায়, কাতরায় আর ফিরতে পারেনা।

এ জন্মের মতো সবই মেঘ, নোনা ধরা কালচে ঘর বাড়ি, জ্বলন্ত প্রতিমা, জ্যোতিচিহ্ন দাঁড়িয়ে রয়েছে একা একা, জ্বরের বেঘোরে হাত ডুবিয়ে ছিলাম, যে শ্রাবনখাল দূরে, সন্ধ্যার সব রং দেখি উড়ে যাচ্ছে, কথা বলবার লোক ক্যানো খুঁজি, আমার সামান্য সুতোর এপাড়া-ওপাড়া, কথা যদি ফিরে যেতে চায়, স্বপ্নের ভেতরে একটা জলের গেলাস, সামান্য জ্ঞানের নুড়ি, যে দিকে সমুদ্র, জোয়ারের ঢেউয়ের মাথায়, হাওয়া সব কথা বলে যায়, যদি চায় তুমি বন্ধু, আমি যে গানের সঙ্গে নেমে যাবো, আর একটু গেলে বর্ষার সমুদ্র, তোমার আঙ্গুলে খর স্রোত, শুধু যদি তোমার কথাই লিখি... 

মানে পুরো বইটাই...

ঘনঘোর লেগে আছে।

হে পাঠক, বইটি সংগ্রহ করে পড়ুন। এই কবির আগের কাব্যগ্রন্থ গুলিও সংগ্রহ করুন। সুমন্ত কে ধন্যবাদ, আরো অনেক অনেক লিখুন। আর ধন্যবাদ একশো আশি ডিগ্রী কে, এই অপরূপ বইটি আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।

আলভিদা...
পারচমেন্ট এবং ফাল্গুনী কে ধন্যবাদ অমিতাভর  এই বইটি পাঠক কে উপহার দেবার জন্য।

No comments:

Post a Comment