কবিতা কবির নৈঃশব্দ,কবির
আলো ও কবির অন্ধকার।কবি তার নিজস্ব নির্মানের মধ্যে দিয়েই সচেতনভাবে ভাঙেন ও
গড়েন।আর এই ভাঙাগড়ার বোঝাপড়াই সম্ভবত জন্ম দেয় তার নিজস্ব কাব্য চিন্তনের। কবি
বিশ্বজিৎ-এর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ ‘তলোয়ারের ডানা থেকে’
এমনই এক কাব্যচিন্তনের সতঃস্ফূর্ত ফসল।
বিশ্বজিৎ সহজ ঘরানার কবি।সহজ,সরল,সুখশ্রাব্য,সমসাময়িক ও আধুনিক শব্দচয়নের
মধ্যদিয়ে তিনি পাঠক মনে ভ্রমণ করেন।বিশ্বজিতের কবিতার মূল অস্ত্র ব্রেভিটি।নিজেকে
আড়াল করে পাঠককে তার মননের সাথে খেলতে দেওয়াতেই তার তৃপ্তি।মধ্যবিত্ত পরিবারের
ছেলে বিশ্বজিৎ জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে যতটুকু দানা খুঁটে খেয়েছেন,ঠিক ততটুকু ভাব নিয়েই তিনি তার কবিতার প্রতিটি ছত্রে অনায়াসে বিচরণ
করেছেন।তাই তিনি বলতে পেরেছেন,
”ভুল করি।চুপ করে বসে থাকি
ভাবতে ভাবতে আরও একটা রাত
জানি, সিদ্ধান্ত কখনও সুখী হবে না...”
”ভুল করি।চুপ করে বসে থাকি
ভাবতে ভাবতে আরও একটা রাত
জানি, সিদ্ধান্ত কখনও সুখী হবে না...”
বাহান্নটি কবিতার সম্ভারে কাব্যগ্রন্হটি
শুরু হয়েছে ‘
আশ্চর্য’ কবিতা দিয়ে।সহজ,সরল ,মোলায়েম শব্দচয়নের মাধ্যমে কবি পাঠকমনে
জলের মত প্রবেশ করেছেন এবং আশ্চর্যভাবে শুরুতেই পাঠকের সাথে যোগসুত্র স্হাপন করতে
সক্ষম হয়েছেন,”শুধু তুমি শুধু আমি, আমাদের বুকভর্তি গুনগুন”। প্রতিদিন জীবনকে
উপলব্ধি করার মধ্য দিয়ে একে একে লিখেছেন’ডেনিম কবিতা’,’শোভাযাত্রা’,ব্রেক’,’বসন্তবিলাপ’ইত্যাদি কবিতা।
আরও নীরবে হিমরক্ত
প্রতিদান কখনও প্রতিধ্বনি হয় না
শুধু চিহ্ন থেকে যায় ”।কবি জীবনকে কখনও ধরতে চেয়েছেন,কখনও হারাতে চেয়েছেন।আর এই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই এক থেকে অন্যরূপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তার কাব্যভাবনা।কখনও বলেছেন,”জোকার হয়ে যাচ্ছি,পরিনত সার্কাসের ভেতর” আবার কখনও বলেছেন,”না,এর মাঝেই প্রকৃত সংসার,দিনরাত বেঁচে থাকার অবলম্বন”।কবি কখনও চঞ্চল হয়েছেন,আবার কখনও বা অটল হয়ে বলতে পেরেছেন”ভালোবাসা ঋতু বদলায়,তুইও বদলে যাস,একটার পর একটা বিকেল নিয়ে...আমি অটল”।এছাড়াও ‘আহত বাগান’,’পরিত্রাণ’,’রণক্ষেত্র’,’অসুখ’,’আলমারি শহরের কাহিনী’ প্রতিটি কবিতার ভেতর কবি নিজেকে সমর্পণ করতে করতে এগিয়েছেন এবং তার এই সমর্পিত আত্মাই পাঠককে তার চিন্তনের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধতে সাহায্য করেছে “কিছুই বলার নেই,কিছুই বলার ছিলনা , চারিদিকে শুধু বয়স বাড়ছে ।“
আরও নীরবে হিমরক্ত
প্রতিদান কখনও প্রতিধ্বনি হয় না
শুধু চিহ্ন থেকে যায় ”।কবি জীবনকে কখনও ধরতে চেয়েছেন,কখনও হারাতে চেয়েছেন।আর এই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই এক থেকে অন্যরূপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তার কাব্যভাবনা।কখনও বলেছেন,”জোকার হয়ে যাচ্ছি,পরিনত সার্কাসের ভেতর” আবার কখনও বলেছেন,”না,এর মাঝেই প্রকৃত সংসার,দিনরাত বেঁচে থাকার অবলম্বন”।কবি কখনও চঞ্চল হয়েছেন,আবার কখনও বা অটল হয়ে বলতে পেরেছেন”ভালোবাসা ঋতু বদলায়,তুইও বদলে যাস,একটার পর একটা বিকেল নিয়ে...আমি অটল”।এছাড়াও ‘আহত বাগান’,’পরিত্রাণ’,’রণক্ষেত্র’,’অসুখ’,’আলমারি শহরের কাহিনী’ প্রতিটি কবিতার ভেতর কবি নিজেকে সমর্পণ করতে করতে এগিয়েছেন এবং তার এই সমর্পিত আত্মাই পাঠককে তার চিন্তনের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধতে সাহায্য করেছে “কিছুই বলার নেই,কিছুই বলার ছিলনা , চারিদিকে শুধু বয়স বাড়ছে ।“
আবার আত্মরতির এই স্তর থেকে বেরিয়ে এসে
কয়েকটি কবিতায় কবিকে পাওয়া গেছে অন্যধারায়।কবি এখানে সমাজ সচেতকও।দেশ ও
রাজ্যের টালমাটাল পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টিপাত করে তাই তিনি সহজেই উচ্চারণ করতে
পারেন,”কবে ছেড়ে গেছে ,তোমার স্বপ্নের বাগান,একরত্তি কুয়াশার রিমঝিম...দেশটা গেছে ,রাজ্যটা
যেন কোথায়...কোন আকাশে ডাংগুলি খেলছ।চারিদিকে কীটের চাষ...” কিংবা “রক্তের গায়ে রাষ্ট্রের দোষ।নুন খেয়ে বেঁচে
দেবার,প্রকাশ্যে প্রতিযোগিতা ...”।
কাব্যিক গাম্ভীর্য ও পান্ডিত্যের আবহকে
কবি তার কবিতায় প্রাধান্য দেননি।নিজশৈলীর ভেতর দিয়েই বুনে নিয়েছেন কথা বলার এক
অমোঘ ভঙ্গী,
যা স্বগতোক্তি হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
“আমি বুদ্ধিজীবী হতে পারিনি, পারিনি পার্টির ধান্দাবাজ ক্যাডার হতে। দিনরাত শুধু অক্ষর ক্ষয় করে গেছি” ।শব্দ ব্যবহার ও বিষয় ভাবনায় বিশ্বজিৎ আধুনিকতা দেখিয়েছেন।কিছু ক্ষেত্রে খুব সহজেই লিখেছেন,”তোমার চোখের মদ থেকে লাবন্য সাজাই” বা “ বৃষ্টিদিনে পাট খেতে মদ খাই।তোমাকে ভুলে আসি সীমানার বাইরে।"আবার কখনও কবি কবিতার ভেতর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন।কবিতায় হাস্যরসাত্মকবোধের প্রয়োগ ঘটিয়ে কবিতাকে দিয়েছেন অনন্য মাত্রা।বলেছেন,” ঈশ্বর এখন ফ্রেন্ডলিস্টে সারাদিন চ্যাট করেন....”।
“আমি বুদ্ধিজীবী হতে পারিনি, পারিনি পার্টির ধান্দাবাজ ক্যাডার হতে। দিনরাত শুধু অক্ষর ক্ষয় করে গেছি” ।শব্দ ব্যবহার ও বিষয় ভাবনায় বিশ্বজিৎ আধুনিকতা দেখিয়েছেন।কিছু ক্ষেত্রে খুব সহজেই লিখেছেন,”তোমার চোখের মদ থেকে লাবন্য সাজাই” বা “ বৃষ্টিদিনে পাট খেতে মদ খাই।তোমাকে ভুলে আসি সীমানার বাইরে।"আবার কখনও কবি কবিতার ভেতর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন।কবিতায় হাস্যরসাত্মকবোধের প্রয়োগ ঘটিয়ে কবিতাকে দিয়েছেন অনন্য মাত্রা।বলেছেন,” ঈশ্বর এখন ফ্রেন্ডলিস্টে সারাদিন চ্যাট করেন....”।
কবি কাব্যগ্রন্হের নামকরণে একধরণের
ব্যঞ্জনার সাহায্য নিয়েছেন।নামকরণটি আসলে তার গভীর জীবনবোধ।কঠিন জীবনকে সহজ ভাবে
গ্রহণ করাই তার প্রকৃত যাপন...এই ভাববোধই কবি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তার গ্রন্হের
নামকরণের মধ্য দিয়ে।তলোয়ার এখানে শুধু প্রতিবাদের প্রতীক নয়,বিদ্রোহের
হাতিয়ার নয়।প্রেমের ধারালো রূপও বটে।জীবনের সুখ-দুঃখ,রাগ-অভিমান,প্রেম -বিচ্ছেদ,সাফল্য-ব্যর্থতার প্রতিটি কঠিন
পরতে কবি মেদুরতার ছাপ ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন যা কাব্যগ্রন্হের নামকরণটিকে সার্থক
করে তুলেছে।
কবিতা নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার
মধ্যেও কবি বিশ্বজিৎ তার নিজের ভাষায় নিজের মত করে সৃষ্টি করে চলেছেন তার
কবিতা।অনর্থক চমক ও বাহুল্যের ব্যবহার ছাড়া নিজ বিশ্বাসের প্রতি আস্থা রেখে তিনি
যে কবিতার ভুবন তৈরি করেছেন,সেখানে পাঠক অনায়াসে
প্রবেশ করতে পারে,কিন্তু অনুকরণ করতে পারেনা।আর এইখানেই
বিশ্বজিতের কবিতার সার্থকতা। তলোয়ারের ডানা থেকে’ বিশ্বজিৎ-এর
অষ্টম কাব্যগ্রন্থ।তার কবিজীবনের প্রতি শুভেচ্ছা রেখে কামনা করি তার কলম তলোয়ারের
মত আরও ধারালো হয়ে উঠুক ও পাঠকমননকে ঋদ্ধ করুক।
পরিশেষে প্রকাশনা সংস্থা ‘স্রোত পাবলিকেশন' কে ধন্যবাদ ।কাব্যগ্রন্থের মুদ্রণ ও কাগজ ,বাঁধাই যথেষ্ট ভালো এবং শিল্পী হিরণমিত্রের প্রচ্ছদাঙ্কণটি নিঃসন্দেহে কাব্যগ্রন্থটির বড় সম্পদ
#
পরিশেষে প্রকাশনা সংস্থা ‘স্রোত পাবলিকেশন' কে ধন্যবাদ ।কাব্যগ্রন্থের মুদ্রণ ও কাগজ ,বাঁধাই যথেষ্ট ভালো এবং শিল্পী হিরণমিত্রের প্রচ্ছদাঙ্কণটি নিঃসন্দেহে কাব্যগ্রন্থটির বড় সম্পদ
#
কাব্যগ্রন্থ -তলোয়ারের ডানা থেকে
কবি - বিশ্বজিৎ
প্রচ্ছদ – হিরণ মিত্র
প্রকাশনা -স্রোত পাবলিকেশন
মূল্য - ১২০ টাকা
কবি - বিশ্বজিৎ
প্রচ্ছদ – হিরণ মিত্র
প্রকাশনা -স্রোত পাবলিকেশন
মূল্য - ১২০ টাকা
No comments:
Post a Comment